• মাধুকর প্রতিনিধি
  • তারিখঃ ১৩-৭-২০২৩, সময়ঃ সন্ধ্যা ০৬:১৪

সৈয়দপুরে দুই নেতার হাতাহাতি



সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি ►

নীলফামারীর সৈয়দপুরে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সভায় সাবেক ও বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যানের বিরোধের জেরে হাতাহাতির ঘটনায় ৫ জন আহত হয়েছেন। গুরুত্বর আহত একজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বুধবার (১২ জুলাই) রাত ৯ টায় উপজেলার কামারপুকুর বাজারে দলীয় অফিসে সংঘটিত এই অপ্রীতিকর ঘটনার জন্য একে অপরকে দায়ী করেছেন বিবাদমান দুই নেতা। 

কামারপুকুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান জিকো আহমেদ বলেন, দলকে সুসংগঠিত করতে এবং উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে জননেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সারাদেশে নতুন সদস্য সংগ্রহ ও পুরাতন সদস্য নবায়ন কার্যক্রম চলছে। এ উপলক্ষে ফরম বিতরণের জন্য বুধবার রাতে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ অফিসে কার্যনির্বাহী কমিটির সভা ডাকা হয়। 

এতে স্থানীয় সিনিয়র নেতৃবৃন্দের মধ্যে কামারপুকুর ডিগ্রী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও সাপ্তাহিক চিকলী পত্রিকার প্রকাশক সম্পাদক আমিনুর রহমান, সাবেক ইউপি সভাপতি রফিকুল ইসলাম সোনার, হাসমত আলী, আব্দুল মান্নান ডাক্তার সহ ইউনিয়ন কমিটির কার্যনির্বাহী সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

সভার মাঝামাঝি সময়ে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ও বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন সরকার বহিরাগত লোকজন নিয়ে এসে অকথ্য ভাসায় গালাগালি শুরু করে। তাঁর সাথে ছিলেন ৩ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক লাবু হোসেন, সাবেক ইউপি সদস্য জাকির জোতদার, আব্দুল মতিনসহ কয়েকজন বিএনপি দলীয় লোক। 

উপস্থিত নেতৃবৃন্দ প্রতিবাদ করলে তারা টেবিল উল্টিয়ে দেয়। এতে আমাদের সবার মোবাইল ও কাগজপত্র পড়ে যায়। পরে তারা চেয়ার মাথার ওপর তুলে ঘোরাতে থাকে। একটা সন্ত্রস্ত অবস্থায় হট্টগোল শুরু হলে পরিস্থিতি শান্ত করতে বসে কথা বলার অনুরোধ জানালে আনোয়ার সরকার নেতৃবৃন্দকে লাঞ্ছিত করে। তোকে সভাপতি মানিনা বলে ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আহসানুল হক বাবুকে ঘার ধরে দলের অফিস থেকে বের করে দেয়ার চেষ্টা করে। 

এতে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। তবুও তাদের নিবৃত করে বসার আহবান জানাই। কিন্তু তারা কোন মিটিং হবেনা বলে সবাইকে বের করে দিতে উদ্ধত হয় এবং বৈদ্যুতিক সংযোগ তার ছিঁড়ে ফেলে। অন্ধকারে সদস্য কুপনের ৯ টি বই, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটির কাগজপত্র, প্রায় সাড়ে ৪ হাজার টাকাসহ ব্যাগ কেড়ে নিয়ে যায়। যাওয়ার সময় টেবিলটা আবার উল্টিয়ে ফেলে এবং চেয়ার ভাঙ্চুর করে। 

জিকো আহমেদ আরও বলেন, তাদের এমন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অনেকেই আঘাত পেয়েছেন। অন্তত ৫ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। টেবিল পড়ে ডান পায়ের বৃদ্ধা আঙ্গুলের নখ উঠে যাওয়ায় রক্তাক্ত গুরুত্বর আহত ইউনিয়ন কমিটির সদস্য আব্দুর রশিদ কে সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। 

রাতে সেখানে গিয়েও বিশৃঙ্খলা করে আনোয়ারসহ তার বাহিনী। নিষেধ করায় উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ দপ্তর সম্পাদক ও দৈনিক মুক্তভাষা পত্রিকার সম্পাদক প্রকাশক ফয়েজ আহমেদের সাথেও অশোভন আচরণ করেন।

তিনি বলেন, আনোয়ার হোসেন ইউপি নির্বাচনে জননেত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নৌকার বিপক্ষে অবস্থান নেয়। এইকারণে তাকে সভাপতি পদসহ সাধারণ সদস্য পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। পরে সাধারণ ক্ষমা করে ইউনিয়নের একজন সাধারণ সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে। অথচ তিনি নিজেকে এখনও সভাপতি পরিচয় দেন এবং উপজেলা ও জেলা নেতৃবৃন্দের নির্দেশনা মানেননা। 

এভাবে তিনি ইউনিয়ন নেতাকর্মীদের মাঝে বিভক্তি সৃষ্টি করে ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করাসহ দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করছে। তাঁর এহেন অসাংগঠনিক উদ্ধত আচরণের বিচার দাবী করেন তিনি। দলের উর্ধ্বতন নেতৃবৃন্দের কাছে এর সঠিক বিচার দাবী করেছেন নিগ্রহের শিকার অন্যান্যরাও। 

আহত আব্দুর রশিদ মাষ্টার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বলেন, আনোয়ার সরকারের অশোভন আচরণের প্রতিবাদ করায় তিনি আমাকেসহ নেতৃবৃন্দকে লাঞ্ছিত করেছেন। আমাকে গলাটিপে শ্বাষরোধ করার চেষ্টা করে। গায়ের পাঞ্জাবী টেনে ছিঁড়ে ফেলেছে। টেবিল উল্টে ফেলায় পায়ে প্রচণ্ড আঘাত পেয়েছি। অনেক রক্তক্ষরণ হয়েছে। আমি তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিবো। 

কামারপুকুর ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন সরকার তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত সব অভিযোগ অস্বীকার করে উল্টো অভিযোগ করে বলেন, মারামারি বা আহত হওয়ার কোন ঘটনাই ঘটেনি। নৌকা প্রতিক নিয়েও ইউপি নির্বাচনে আমার সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ব্যর্থ হয়ে প্রতিহিংসা বশতঃ আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে জিকো আহমেদ। 

তাঁর বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে ইতোপূর্বে এই ইউনিয়নে বিএনপি'র প্রার্থী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিল। সেই কারণে গত নির্বাচনে আমি দলীয় প্রার্থীতা দাবী করেছিলাম। কিন্তু ষড়যন্ত্র করে জিকো মনোনয়ন নিয়েছিল। কিন্তু নির্বাচিত হতে পারেনি। দলের লোকজনের সাথে সুখে দুখে থেকে সকল কর্মসূচীতে ওতোপ্রোত নিয়োজিত থাকায় তারা আমাকে নির্বাচিত করেছেন। 

আওয়ামীলীগের প্রার্থী থাকার পরও বিএনপি'র প্রার্থীকে পরাজিত করে এই ইউনিয়নের হারানো চেয়ারম্যান পদটি পূণরোদ্ধারের কারণে আমাকে সাধারণ ক্ষমা করে দলীয় পদ ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। অথচ জিকো আহমেদ একক আধিপত্য তৈরীর জন্য আমার লেকজনকে বাদ দিয়ে ভূয়া সদস্য ঢুকিয়ে ভেজাল কমিটি করে আমাকেসহ অনেক সক্রিয় ও নিবেদিত নেতাকর্মীকে না জানিয়েই নিজের পছন্দের লোকজনকে নিয়ে সভা করছেন।

এমনকি আমাকে সমর্থন করেন এমন সদস্যদের নবায়নের কুপন না দেয়ায় প্রতিবাদ জানাতে গেলে দলীয় অফিসে ঢুকতে বাধা দেয়া হয়। এতে সামান্য ধ্বস্তাধস্তি হয়েছে। সেটাকে রংচং মাখিয়ে উপস্থাপন করে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করছে জিকো আহমেদ গংরা। কিন্তু তারা নির্বাচনের মত এক্ষেত্রেও ব্যর্থ হবে।